ক্লাসের বোকা ছেলেটা যখন আমায় প্রপোজ করলো তখন ভাবলাম-- "এই ছেলেটা কতোটা বোকা,
যে কিনা চুলে তেল দেয়, সিঁথি কাটে, কথা বলতে গেলে হাত-পা কাঁপে, ঠিক নরম কাঁদা যেমন।
নরম কাঁদা যেমন গড়াবো তেমন গড়বে।
বর্তমানে তো সব জায়গায় ছেড়ে যাবার গল্প।
এবার না হয় আমি একটা থেকে যাবার গল্প তৈরি করবো এই বোকা ছেলেকে দিয়ে।
যে স্মার্ট হবেনা তাতে কি কখনো তো আমায় ছেড়ে যাবে না।" সবাই যখন ভাবলো আমি রিজেক্ট করবো উদাসকে।
কিন্তু তখন আমি সবাইকে অবাক করে দিয়ে হ্যা বলে দিলাম।
ক্লাসের সব থেকে সুন্দরী রমনী না হলেও সুন্দরের তালিকায় আমার নাম ছিলো।
সেই সুন্দরী কিনা একটা বোকা ছেলের প্রেমের প্রস্তাব মেনে নিলো।
সবাই ভাবলো হয়তো আমি টাইমপাস করার জন্য এমনটা করেছি।
কিন্তু কেউ জানতো না, আমি সত্যি ওই বোকা হাঁদারাম ছেলেটাকে মন থেকে একসেপ্ট করেছিলাম।
তারপর থেকে আমাদের প্রেমের দিন শুরু।
কখনো আমরা লং ড্রাইভে যাইনি, কিন্তু এক রিক্সায় পাশাপাশি বসে অনেক গল্প করেছি।
দিন শেষে আমাদের কথার ঝুড়ি খুলে রাখার জন্য ছিলো চিঠি।
সারাদিনের জমানো কথা গুলো আমরা চিঠি লিখে একে অপরকে দিতাম।
পুরো আদিকালের সংস্কার দিয়ে আমাদের প্রেমটা আমি শুরু করেছিলাম।
প্রায়শো দেখা করা, রাত করে বাড়ি ফেরা, সন্দেহ করা তা আমাদের মাঝে কিছুই ছিলো না।
একটা সময় পর আমার মনে হলো-- "নাহ আমি এই বোকা ছেলেকে ভালোবেসে ভুল করিনি।"
তারপর কলেজ জীবন শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পা দিলাম।
আর সে চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে।
কারণ যে একটাই আমার যোগ্য হয়ে ওঠা।
আমি তাঁর বেকারত্ব মেনে নিলেও আমার পরিবার যে মেনে নিবে না।
তাই তাঁর সকল চেষ্টা আমার জন্য।
আমি এই কথা গুলো ভাবলেই আমার কোথাও যেন সুখ সুখ অনুভব হতো।
তারপর তাঁর কষ্টের ফলাফল পেলো।
খুব ভালো একটা চাকরি পেয়ে গেলো।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদের চাকরি, ইসস ভাবা যায়।
সেদিন আমি কতো খুশি হয়েছিলাম তা কাউকে বোঝাতে পারবো না।
সে এখন পুরোপুরি আমার যোগ্য।
হঠাৎ তাঁর মাঝে আমি পরিবর্তন দেখলাম! এখন সে চুলে ঠিক আগের মতো তেল দেয় না, সিঁথিও কাটে না।
একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম-- "তুমি এখন চুলে তেল কেন দেও না?
সিঁথিও বা কাটো না কেন?"
তখন সে বললো-- "চুলে তেল দিলে আর সিঁথি কাটলে তাঁকে নাকি বোকা বোকা লাগে।" সেদিন হঠাৎ তাঁর মুখে এই বোকা কথাটা শুনে তাঁকে হারানোর ভয় হলো আমার।
তবুও মনকে বোঝালাম ধূর মন কি যে ভুলভাল ভাবিস, নতুন চাকরি একটু তো নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে।
কিন্তু একটা সময় পর আমি বুঝতে পারলাম, আমার মন ঠিক ভেবেছে।
সে পাল্টে গেছে, সে স্মার্ট হয়েছে।
সে এখন আর আগের মতো বোকা নেই।
আর না সে নরম কাঁদার মতো আছে।
এখন তাঁকে একটা কথা বললে সে পাল্টা কথা বলতে শিখে গেছে।
আর ফলস্বরূপ তাঁর আর আমার গল্প সমাপ্তি হয়ে গেছে।
এটা ঠিক সে আমাকে ছেড়ে যায়নি, কিন্তু সে আমাকে থেকে যেতেও বলেনি।
আমি তাঁর ভেতর বাহিরে কোথাও নিজেকে খুঁজে পাইনি।
তাই তাঁর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।
সে আমাকে আর খোঁজেনি আর আমিও নিজেকে তাঁর নিকট ধরা দেয়নি।
তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাতটি বছর।
সেদিন তাঁর সাথে আমার হঠাৎ হসপিটালে দেখা হলো।
আমি তাঁকে দেখে চিনতে পারিনি, কারণ সে যে আগের মতো বোকাটি নেই।
আমাকে দেখে দূর থেকে বললো-- "হেই কবিতা কেমন আছো?"
চোখের চশমাটা ভালো করে ঠিক করে তাকালাম কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বুঝলাম ও উদাস।
যাকে আমি একটা সময় ভালোবাসতাম।
একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম, তাঁর মাঝে কতটা পরিবর্তন এসেছে।
সৌজন্যের খাতিরে হেঁসে বললাম "আলহামদুলিল্লাহ, তুমি? "
তখন সে একটি চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললো-- "ভালো, তা এখানে কি করতে এসেছো কোন কাজ ছিলো।"
_হুম ডাক্তার দেখাতে,তুমি?
_ আমিও
_ কিন্তু আমি যতোদূর জানি এটা গাইনি বিভাগের অধ্যাপক সুইটির চেম্বার। এখানে তোমার কি কাজ?
_ আমার না আমার স্ত্রী।
_ আচ্ছা, তোমার স্ত্রীর বেবি হবে কী?
_ না
_তাহলে?
_ আসলে আমার স্ত্রীর মিসক্যারেজ হয়েছে।
_ আচ্ছা,চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে। অনেকের প্রথম বাচ্চার সময় এমন হয়।
_ না কবিতা, এটা নিয়ে আমাদের চতুর্থ সন্তান মিসক্যারেজ হয়েছে, আর আমাদের প্রথম সন্তান আমরা নষ্ট করে ফেলেছিলাম।
ভেবেছিলাম এতো অল্প বয়সে বাচ্চা নেওয়া মানে লাইফটাকে নষ্ট করা।
তাই ভেবেছিলাম লাইফটা এনজয় করে না হয় বাচ্চা নিবো।
কিন্তু এখন?
থাক বাদ দাও,তুমি চেকাপ করাতে এসেছিলে তাঁর মানে তুমি প্রেগন্যান্ট।
_ হুম পাঁচ মাসের।
_এটা প্রথম
_উঁহু দ্বিতীয়
_ বাহ্,প্রথম কি?
_ ছেলে।
_ আলহামদুলিল্লাহ, এখন কি মেয়ের ইচ্ছে।
_ আল্লাহ যা দিবেন তাতেই সন্তুষ্টি। আচ্ছা আমি আসি, গাড়িতে আমার বর অপেক্ষা করছে।
_ আচ্ছা।
তারপর আমি চলে এলাম।
একবার মনে হয়েছিলো বলি-- "অতি স্মার্ট দেখাতে গিয়ে এখন কতোটা ভুগতে হচ্ছে দেখেছো।" কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা থেকে বলতে পারলাম না।
যাইহোক সবাই ভালো থাকুক এটাই কামনা।
উদাস আমাকে এটাই বোঝালো বোকা ছেলেরাও স্মার্ট হতে পারে।
তারা-ও ধোঁকা দিতে জানে।
কিন্তু স্মার্ট হয়ে কি লাভ যদি সেই সুখ গুলো জীবন থেকে হারিয়ে যায়, যা বোকা থাকার জন্য পেয়েছিলাম।
আমি দিন শেষে সুখি কারণ আমি বোকাই রয়ে গেছি।
সমাপ্তি।
অনুগল্প : বোকা আমি
লেখনীতে সমুদ্রিত সুমি।
সংগৃহিত......