বড় বোন পরকীয়ায় লিপ্ত; ছোট ভাইয়ের কী করণীয়?

 

বড় বোন পরকীয়ায় লিপ্ত; ছোট ভাইয়ের কী করণীয়?

জিজ্ঞাসা–: এক প্রতিবেশীর প্রশ্ন, ‘কারো বড় বোন যদি পরকীয়া করে, তাহলে ছোট ভাই জানতে পারলে ছোট ভাইয়ের কি করণীয়’, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে জানতে চেয়েছে।–Unknown

জবাব: সন্দেহ নেই, বড় বোনের পরকীয়া জানার পর যদি ছোট ভাই তাকে বাঁধা না দেয় তাহলে সে দাইয়ুসের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা, দাইয়ুসের পরিচয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,

اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ

দাইয়ুস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না। (তাবরানি ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব ৩৪৭৬)

অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,

الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ

ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে, তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ ৫৩৭২)

ইবনু হাজার হাইথামি রহ. বলেন,

قال العلماء : الديوث الذي لا غيرة له على أهل بيته

‘আলেমগণ বলেছেন, দাইয়ুস বলা হয়, যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।’ (আযযাওয়াজির ২/৩৪৭)

সুতরাং ছোট ভাইয়ের প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,

১. নিজের বোনকে আল্লাহ তাআলাকে যথাসাধ্য ভয় করার নসিহত বার বার করবেন। এ জন্য বাসায় তালিমের ব্যবস্থা চালু করতে পারেন  কিংবা কোনো মুত্তাকী আলেমের নসিহত শুনানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

২. পরিবারের সকলে মিলে তার অবসর সময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে তাকে একাকী থাকার সুযোগ মোটেও দেয়া যাবে না। যাতে সে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার পরিবেশ না পায়। কেননা, অনেক মেয়ে তাদের দিন-রাত অবসর সময়গুলো বেছে নেয় এজাতীয় কাণ্ড চালানোর জন্য, ফোনে কথা বলার জন্য।

৩. তাকে ভদ্র ভাষায় ব্যভিচারের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করুন। তাকে বলুন যে, ইসলামে এর শাস্তি হচ্ছে, ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে হয়। এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। সমাজে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে ইত্যাদি।

৪. বোনটি যার সঙ্গে  পরকীয়ায় জড়িত সম্ভব হলে সে লম্পটের সঙ্গে তার যোগাযোগ রাখার সকল উপায় বন্ধ করে দিন। এ লক্ষে প্রয়োজনে যদি সম্ভব হয় তাকে বাসায় আবদ্ধ করে রাখুন, যাতে তিনি বাহির হতে না পারেন। উল্লখ্য, এর অর্থ এই নয় যে, তাকে কোনো কামরায় বন্দি করে রাখবেন কিংবা পায়ে শিকল পরিয়ে রাখবেন!

৫. আপনার বোনকে এবং পরিবারের সকলকে হেকমত, বুদ্ধিমত্তা ও বিনয়ের সঙ্গে পর্দার গুরুত্ব, পর্দাহীনতার পরিণতি, বিজাতীয় সংস্কৃতি মেনে চলার ক্ষতি ও অশ্লীলতার কদর্যতা বিষয়ে অবহিতকরণ অব্যাহত রাখবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম ৬)

৬. বোনটিকে তার স্বামীর সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর পরিবেশ করে দিন। আর যদি বোনটি বিধবা হয়ে থাকে তাহলে তাকে দ্রুত বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আপনার পরিবারকে উৎসাহিত করুন।

৭. বোনের হেদায়েতের জন্য দোয়া নিয়মিত দোয়া করবেন। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করা যাবে না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা ত্বলাক ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)

প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী ভাই, উপরোক্ত কাজগুলো হেকমত ও ধৈর্য্যের সঙ্গে অব্যাহত রাখতে পারলে এবং পাশাপাশি প্রশ্নেল্লেখিত গুনাহটির প্রতি ছোট ভাইয়ের অন্তরে ঘৃণা বিদ্যমান থাকলে আশা করা যায়, তিনি গুনাহটির দায়ভার থেকে ‘ইন শা আল্লাহ’ অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।

والله أعلم بالصواب
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post